ইহরাম ( Ihram) আরবি শব্দ , যার অর্থ নিষিদ্ধ বা হারাম । অর্থাৎ কোনো জিনিষকে নিজের ওপর নিষিদ্ধ বা হারাম করে নেওয়া । নামাজে যেমন নিয়ত করতে হয়, তেমনি হজ বা উমরাহ করার জন্য ইহরাম বাঁধতে হয়, এই ইহরাম ই হলো হজ বা ওমরার নিয়ত । ইহরাম অবস্থায় দুনিয়াবী অনেক হালাল কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায় ।
মীক্বাত কি ? | What is Mikat
হজ বা উমরাহ এর উদ্দেশ্যে যে নির্ধারিত স্থান থেকে ইহরাম বাঁধতে হয় , ওই স্থানকে মীক্বাত বলে ।
হজ বা উমরাহ এর স্থানগত মীকাত ৫ টি
১. জুলহুলাইফাহ
২. আল জুহফা
৩.কারনুল মানাযিল
৪. ইয়ালামলাম
৫. জাতুইরক
বাংলাদেশ এর হজ / উমরাহ যাত্রীগণ “ইয়ালামলাম ” থেকে ইহরাম বাধবে / নিয়ত করবে , বাসা বা ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে ইহরাম এর কাপড় পরিধান করবে কিন্তু ইহরাম বাধবে মীকাত থেকে । বিমান এর ভিতরে মীকাত পয়সানোর ৩০মিন পূর্বে ইহরাম বাধার ঘোষণা দেওয়া হয় । তখন সবাই ইহরাম বাধবে অর্থাৎ নিয়ত করবে । ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করা যাবে না । ইহরাম এর কাপড় পরা, ইহরাম বাধা এক নয়।
বাংলাদেশের হজ-উমরাহ যাত্রীগণ তাদের বাসা বা ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে ও ইহরাম বাঁধতে পারে ,
তবে মীকাত থেকে বা পূর্বক্ষণে ইহরাম বাধা উচিৎ । কারণ নবীজি রাসূলুল্লাহ সাল্লেল্লাহু ওয়ালিহিসালাম মীকাতে পৌঁছে ইহরাম করতেন । তাই মীকাত এ না পৌঁছে ইহরাম করবে না এবং তালবিয়া ও পাঠ করবে না ।
পুরুষদের জন্য সেলাইবিহীন ২ টুকরা সাদা কাপড় , একটি নীচে পরবে। দ্বিতীয়টি গায়ে দিবে। ৩য় আর কোন প্রকার কাপড় গায়ে রাখা যাবে না। যেমন টুপি, গেঞ্জি, জাইঙ্গা বা তাবীজ কিছুই না। তবে শীত নিবারণের জন্য চাদর ও কম্বল ব্যবহার করতে পারবে। তবে মাথা ঢাকা যাবেনা । পায়ে ২ফিতার সেন্ডেল পরবে।
মেয়েদের ইহরাম এর জন্য বিশেষ কোনো ড্রেস নেই , সম্পূর্ণ শরীর ঢিলাঢালা ভাবে আবৃত করে এমন যেকোনো রং এর সাধারণ শালীন পোশাক পরবে , তবে মুখমন্ডল এবং হাতের কব্জি খোলা থাকবে | নিকাব ও হাতমোজা পরবেনা | মাহরাম ব্যতীত অন্য পুরুষ থেকে পর্দা করার জন্য ওড়না জাতীয় কিছু ব্যবহার করবে | মহিলাগণ পায়ে মোজা পরতে পারবে .
হায়েয-নেফাস অবস্থায় মেয়েরা পরিচ্ছন্ন হবে, গোসল করবে, ইহরাম বাধবে। কিন্তু হায়েয-নেফাস অবস্থায় নামায পড়বে না এবং কাবাঘর তাওয়াফ করবে না। বাকী অন্যসব কাজ করবে। এরপর যখন পবিত্র হবে তখন অজু-গোসল করে তাওয়াফ ও সাঈ করবে। যদি ইহরামের পর হায়েয শুরু হয় তখনো কাবা তাওয়াফ করবে না যতক্ষণ পবিত্র না হয়।
মীকাত থেকে নিমলিখিত কয়েক ধরণের মধ্যে থেকে যেকোনো একধরণের নিয়ত করতে হবে
উমরাহ যাত্রীগণ উমরাহ এর জন্য ইহরাম বাধবে অর্থাৎ নিয়ত করবে ।
লাব্বাইক উমরাতান (অর্থ: আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে ওমরার জন্য হাযির)
বিস্তারিত উমরাহ গাইড ( পুরুষ / মহিলা ) দেখতে এখানে ক্লিক করুন
তামাত্তু হজ্জের ( Tamattu Hajj ) যাত্রীগণ মীকাত থেকে উমরাহ এর নিয়ত করবে
লাব্বাইক উমরাতান (অর্থ: আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে ওমরার জন্য হাযির)
এবং মক্কা হোটেল থেকে মিনা যাওয়ার পূর্বে হজ এর নিয়ত করবে
‘লাব্বাইক হাজ্জান’ (অর্থ: আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে হজ্জের জন্য হাযির) ।
ক্বিরান হজ্জের যাত্রীগণ উমরাহ এবং হজ্জের উভয় নিয়ত একসাথে করবে
‘ লাব্বাইক উমরাতান ওয়া হাজ্জান’ (অর্থ: আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে ওমরা ও হজ্জের জন্য হাযির) ।
ইফরাদ হজ্জের যাত্রীগণ হজ এর নিয়ত করবে
‘লাব্বাইক হাজ্জান’ (অর্থ: আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে হজ্জের জন্য হাযির) ।
উচ্চস্বরে ( পুরুষ ), নিন্মস্বরে ( মহিলা ) তালবিয়া পাঠ করবে , তালবিয়া নিজে নিজে পাঠ করতে থাকবে দলবেঁধে তালবিয়া পাঠ করা সুন্নত সম্মত নয়।
ইহরাম বাধা অর্থাৎ নিয়ত করার পরথেকেই তালবিয়া পাঠ শুরু করবে , শেষ করবে তাওয়াফ শুরু করার পূর্বক্ষণে। হজ এর তালবিয়া ১০ই জিলহজ বোরো জামারায় পাথর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকবে।